দিন দুপুরে কলেজ ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২ ছিনতাইকারীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং একই মামলায় অপর আর এক ছিনতাইকারীকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডের রায় দিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) আদালতে তিনি এ রায় ঘোষনা করেন।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এডঃ রনজিত দাশ ও বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসেন রায়ের তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে ( ১) মোঃ আবু ছিদ্দিক(৩৫) পিতা আবুল কালাম,সাং এবিসি ঘোনা, দক্ষিন রুমালিয়ারছড়া, কক্সবাজার পৌরসভা,(২) মনির আলম(২০) পিতা মমতাজ সাং গাজীর ডেইল,খুরুস্কুল, থানা ও জেলা কক্সবাজারদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ১ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে, অপর আসামী মোঃ সেলিম প্রঃ পুতু(২০) পিতা সৈয়দুল আমিন সাং তেতৈয়া, খুরুস্কুল, কক্সবাজারকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ডের আদেশ প্রচার করেন।
আদেশে অর্থ দন্ড হতে ভিকটিম ১ লক্ষ টাকা প্রাপ্ত হবেন, অবশিষ্ট ১০ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্র মতে, ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারী দুপুর অনুমান ২:৫০ ঘটিকার সময় সংবাদদাতা রবিউল হাসানের ছোট ভাই কক্সবাজার সরকারী কলেজের বিবিএ ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত ইমরুল ইসলাম (২২) ও শ্যালক টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার জাদিমুরা এলাকার মোঃ ওয়াহিদ মুরাদ (২০) বেড়াতে যাওয়ার সময় কক্সবাজার শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিলডাউন সার্কিট হাউজের গেইটের সম্মুখে রাস্তায় পৌছিলে আসামীগন টমটম গাড়ির গতিরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কি কি আছে বের করে দিতে বললে ইমরুল ইসলাম প্রতিবাদ করে। তখন ১ নং আসামী মোঃ আবু ছিদ্দিক ও ২ নং আসামী মুন্না হাসান প্রঃ মোঃ আমিন(২৮) ধারালো ছোরা দিয়ে তাকে শরীরে এলোপাতারী আঘাত করে রক্তাক্ত জখম ও হাতের আঙ্গুলের রগ কেটে ফেলে। এ সময় মোঃ ওয়াহিদ মুরাদ এগিয়ে আসলে অপরাপর আসামীরা তাকেও মারধর করে। আসামীরা তাদের নিকট থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ছিনাইয়া নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পথচারী লোকজন তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় ভিকটিম ইমরুল ইসলামের বড় ভাই মহেশখালী উপজেলার মহেশখালী পৌর এলাকার হাজী মোবারক আলী পাড়ার মোঃ হোসেনের ছেলে বর্তমানে কক্সবাজার পৌর এলাকার পেশকার পাড়ার বাসিন্দা রবিউল হাসান ২ জন আসামী মোঃ আবু ছিদ্দিক ও মুন্না হাসান প্রঃ মোঃ আমিনকে এজাহারনামীয় আসামী ও ২ জনকে অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে গত ০৫/০১/২০২০ ইং তারিখ কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এজাহার দায়ের করে। যার কক্সবাজার সদর মডেল থানা মামলা নং ১২ তাং ০৫/০১/২০২০ ইং, ধারা ৩৯৪ দন্ডবিধি। জি,আর মামলা নং ১২/২০২০ ( সদর) এস,টি মামলা নং ৯৪৬/২০২০।
এ ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ নিয়ে পুলিশ আসামীদের শনাক্ত করে। আসামী মোঃ আবু ছিদ্দিক পুলিশ কর্তৃক ধৃত হলে সে ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দেন। এ মামলার এজাহার নামীয় ২ নং আসামী মুন্না হাসান প্রঃ মোঃ আমিন (২০) পিতা আবুল বশর, সাং রাবিয়া পাড়া,৫ নং ওয়ার্ড, শাপলাপুর, মহেশখালী, বর্তমানে- উত্তর আদর্শগ্রাম, কলাতলী রোড, কক্সবাজার ঘটনার ৪ দিন পর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মৃত্যুবরন করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মৃত মুন্না হাসানকে বাদ দিয়ে ৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলে, মামলাটি বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়, বিজ্ঞ বিচারক ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী বিচারের জন্য আসামীদের বিরুদ্ধে মামলায় চার্জ গঠন করেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ১০ জন সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করলে আসামী পক্ষে সাক্ষীদের জেরা শেষে আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনসহ সব বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন দন্ডবিধির ৩৯৪ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে আসামীদের সাজা প্রদান করেন।
যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামী মোঃ আবু ছিদ্দিক ও মনির আলম রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। ১০ বছর দন্ডপ্রাপ্ত আসামী মোঃ সেলিম প্রঃ পুতু পলাতক রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন-অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট রনজিত দাশ।
আসামী পক্ষে ছিলেন এডঃ হরি সাধন পাল ও অনিক ইসলাম আকিব।
Leave a Reply