Advertisement

বালুখালীতে র‍্যাবের পরিচয়ে কোটি টাকার স্বর্ণের বার ছিনতাই

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বাহির হচ্ছে স্বর্ণের বার! এমন খবর পেয়ে উখিয়ার বালুখালি আছইন্না পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় র‍্যাব-১৫’র পরিচয়ে রোহিঙ্গার স্বর্ণের বার ছিনতাইয়ের জন্য চেক পোস্ট বসিয়েছিলো স্থানীয় ছিনতাইকারী চক্র।

গত রবিবার (২৬ ফ্রেব্রুয়ারি-২০২৩ইং) দুপুর ২টার দিকে ১০টি স্বর্ণের বার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন একাধিক স্থানীয় সচেতন মহল। এক রোহিঙ্গা ছিন্তাইয়ের স্বীকার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

  • চেক পোস্ট বসিয়ে পরিচয় দেয় র‍্যাব
  • রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় সর্বস্ব 
  • সক্রিয় ছিনতাই ও প্রতারক চক্র 
  • স্বর্ণের বার মেরে দিয়েছে কোটি টাকার
  • পরিচয় দেয় প্রশাসনের স্পেশাল ব্রাঞ্চ
  • আতঙ্কে থাকে সাধারণ মানুষ
  • সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা

স্থানীয়রা জানান, বালুখালির আছইন্না পাহাড় সংলগ্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গা এক স্বর্ণ ব্যবসায়ির কাছ থেকে ১০টি স্বর্ণের বার ছিনতাই করেছে মিজানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ। ভুক্তভুগীর ভাষ্যমতে ছিনতাই হওয়া স্বর্ণের বার ১০টি (২০ভরি) যার আনুমানিক মূল্য ১৮লক্ষ টাকা।

বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, স্বর্ণেরবার চিন্তায়কারী বালুখালি ২ নং ওয়ার্ডের মীর কাসেমের ছেলে দিদার মিয়া (প্রকাশ আব্বিয়া), একই এলাকার জহুর আলমের ছেলে উম্মে হাসান, বার্মায়া বেলালের ছেলে নুরুল আমিন বাদশা, প্রকাশ শিং বাদশা, আশিক, বদিউর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান। ঘুমধুম উত্তর তুমব্রু এলাকার বদিউর রহমান ছেলে মোঃ ইউসুফ আলী।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় এক ব্যাক্তি ক্যামেরার সামনে এসে বলেন, স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনাটি আমি জানি যা ঘটেছে আমার সামনে ঘটেছে ওখানে মিজান, দিদার, নুরুল আজিম বাদশাহ, এমর হাসান, হেলাল এরা সিন্ডিকেট করে থাকে। তারা র‍্যাব পরিচয়ে সব সময় ঘাপটি মেরে বসে থাকে। ঘটনার সময় তাদের কোমরে ছুরি ছিলো তারা ভয় দেখিয়ে রোহিঙ্গার কাজ থেকে স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যায়। আমি এটা নিজের চোখে দেখছি।

অভিযুক্ত মিজানের স্ত্রীর সাথে মিজানের একটি কল রেকর্ড থেকে জানা যায়, স্বর্ণের বার ১০টি, যার প্রতিটির মূল্য ১০ লক্ষ করে ১কোটি টাকার স্বর্ণ। ফোন কলে তার স্ত্রীকে (তার স্ত্রীর সাথে পারিবারিক কলহের কারণে) বলেন, স্বর্ণের যে বার মেরে দিছি এখন আমার কাছে প্রচুর টাকা আছে আমি তুকে এখন ডিভোর্স দিতে আর কোন সমস্যা নাই। কল রেকর্ডে মিজানকে স্ত্রী বলতে শুনা যায়, ওই স্বর্ণের অবৈধ টাকা খাওয়াতো দুরের কথা রাখতে পারিস কিনা দেখ। যে কল রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষণ রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত মিজানের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে ঘটনা অস্বীকার করে। পরে ঘটনা স্বীকার করে জানান, আমি ছিনতাই করিনি অন্যন্যরা করেছে। অভিযুক্ত অন্যান্যদের বক্তব্য নেওয়া চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় এক ব্যাক্তি বলেন, এই চক্রের যারা আছে তাদের সব কিছু কন্ট্রোল করে ঘুমধুমের প্রায় ডজন খানেক মামলার আসামি ইউসুফ আলী। সে চট্টগ্রাম থেকে এই চোরাচালান ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে। তার বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা জাতীয় ও স্থানীয়সহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করার কারণে পালিয়ে চটগ্রাম রয়েছে। এই সিন্ডিকেট প্রধান ইউসুফের সাথে প্রশাসনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল এক সময়। সে পরিচয়ের সুবাধে প্রায় সময় উখিয়া ও বালুখালীতে র‍্যাব, পুলিশ, ডিবি, বিজিবিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার ভূয়া পরিচয়ে টাকা পয়সা, স্বর্ণসহ বৈধ-অবৈধ সব কিছু ছিনিয়ে নেওয়া তাদের নিয়মিত কাজে পরিনত হয়েছে। এই চক্রের বিরুদ্ধে রয়েছে ডাকাতি, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগ।

স্থানীয় জসিম নামের এক ব্যাক্তি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প হতে কোন কিছু বাহির হওয়া কথা শুনলে প্রশাসনের পরিচয়ে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে বৈধ-অবৈধ যা আসে হাতিয়ে নেয় তারা।

স্থানীয় সংবাদকর্মী জয়নাল বলেন, এই চক্রটি প্রশাসনের পরিচয়ে আমার এক খুব কাছের মানুষকে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো পরে স্থানীয় কিছু লোকদের কারনে তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারী কোটি টাকার স্বর্ণের বার ছিনিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এক সিনিয়র সংবাদিক বলেন উখিয়া ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে-বাহিরে যত অপরাধ সংঘটিত হয় এই চক্রটির মাধ্যমে হয়ে থাকে। ইউসুফ ওসি কিংবা র‍্যাবের বড় কর্মকর্তা অথবা প্রশাসনের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াত। এখন সে দুর থেকে তার সিন্ডিকেট পরিচালনা করে যাচ্ছেন।

স্থানীয়দের দাবি এই সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় আনা হলে উখিয়া ও রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অপরাধ অনেক আংশে কমে যাবে।

[ তৃতীয় পর্ব ]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *