Advertisement

উখিয়ায় বাড়ছে ভূয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য

উখিয়াসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভুয়া ডাক্তারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এখন সবখানইে তাদের বিচরণ। অনুমোদনহীন বিভিন্ন ফার্মেসী ও মিনি ক্লিনিক খুলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অনেকই বড় ধরণরে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। যার ফলে শঙ্কা বেড়েছে সচেতন মহলের কাছে। এতে ভুয়া সনদ দিয়ে সহযোগিতা করছে বিভিন্ন পল্লী চিকিৎসক তৈরির প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুবিধা নিচ্ছে এক শ্রেনীর অসাধু মানুষ। কোন রকম একটি ফার্মেসী দিতে পারলেই নিজেই ডাক্তার সেজে চালিয়ে যাচ্ছে রোগী ব্যবসা। এ ধরণের ভূয়া ডাক্তারের সংখ্যা জেলা শহরের চেয়ে গ্রামগঞ্জে বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ফার্মেসী মালিকই ডাক্তার সেজে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে ডাক্তার লেখার নিয়ম না থাকলেও এল,এম,এফ পাশ করে নিজেকে ডাক্তার লিখে প্রকৃত ডাক্তারদের মানহানি করে চলছে। যেটি আইনের চোখে বড় অপরাধ।

এরকম এক ভূয়া ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া গেছে উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায়।
কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী পান বাজার, পশ্চিম পাড়া রোড়স্হ রাহমতুল্লাহ ফকির মার্কেটের ভিতরে আয়ুর্বেদিক “ইনডেক্স সেলস সেন্টার”র নাম দিয়ে একটি এলোপ্যাথিক
ফার্মেসী খুলে নিয়মিত রোগী দেখছেন
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ইসলাম নগর এলাকার আব্দুর রহমানের পুত্র
ডাক্তার মোহাম্মদ পারভেজ প্রকাশ আর্মি ডাক্তার। সে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আর্মি ডাক্তার হিসেবে পরিচিত।
তার কোন ডাক্তারী সার্টিফিকেট না থাকলেও সে নিজেকে বড় ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা সেবার নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। উক্ত “ইনডেক্স সেলস সেন্টারের নামে নেই কোন ড্রাগ লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্স। ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক দেয়া ট্রেড লাইসেন্সে ফার্মেসীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে
আল সেফা ফার্মেসি নামে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোন রোহিঙ্গা কর্মচারীকে ফার্মেসিতে চাকুরী দেয়ার উপর বিধি নিষেধ থাকলেও
সে উক্ত নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে
রোহিঙ্গা কর্মচারী জাফর উল্লাহ, পিতা আব্দুল আলিম, মাতা আমিনা খাতুন, ব্লক বি-৬২, ক্যাম্প-৮/ই কে দিয়ে দেদারসে উক্ত
ফার্মেসি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
এদিকে বেশ কয়েক বছর থেকে ডাক্তার মোহাম্মদ পারভেজ নিজেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এলাকায় আর্মি ডাক্তার লিখে ২শ থেকে ৩শ টাকা ফি নিয়ে রোগী সেবা নয় রোগীদের হয়রানি করার অভিযোগ ওঠেছে তার বিরুদ্ধে। অতিরিক্ত ফি-সহ অনেক রোগীকে ভুল চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে অনেক রোগীর স্বজনরা দাবী করছেন। উখিয়াতে মোহাম্মদ পারভেজের মতো এমন ডাক্তারের অনেক ছড়াছড়ি রয়েছে। যারা ডাক্তার লিখার যোগ্যতা না থাকলেও নিজকে বড় ডিগ্রীধারি ডাক্তার লিখে রোগী দেখে যাচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে প্রকৃত ডাক্তরা ইতিপূর্বে অনেক আন্দোলন করে আসলেও সংশ্লিষ্ট তরফ থেকে দৃশ্যমান কোন সুরাহা পাচ্ছে না। দিনের পর দিন এমন ভুয়া ডাক্তারের হার প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে ।
ডাক্তার না হয়েও তিনি কিভাবে রোগী দেখছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ পারভেজ জানান, আমার কোন ডাক্তারি সার্টিফিকেট নেই,আমি ডাক্তার না, এবং কোনখানে ডাক্তার লিখিনা বাট সাদা কাগজে খোঁচা মেরে কিছু ইউনানী আয়ুর্বেদিক ও কিছু অটবি প্রোডাক্ট লিখে দিই সেগুলোকে খেয়ে মানুষ ভালো হয়ে যায় এবং ছোট কাটো বিষয়ে আমি রোগীদের চিকিৎসা করি , সিরিয়াস কেস হলে আমি সাথে সাথে রেফার করে দিই। আমি আয়ুর্বেদিক থেকে পিডিএম করেছি, বিভিন্ন হসপিটাল থেকে এক্সপেরিয়েন্স নিয়েছি এবং ঢাকা মেডিকেল টেকনোলজির আন্ডারে একটি ডিপ্লোমা কোর্স নিয়েছি বলে তিনি জানান।
বালুখালী পান বাজার এলাকার লোকজন জানান, এই এলাকায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কোন ডাক্তার নেই । প্রতিটি ফার্মেসীতে রয়েছে একজন ডাক্তার। সাইন র্বোডে এদের নামের আগে ডাক্তার লেখা থাকলওে এরা কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত কোন ডাক্তার নয়।


একটি সুত্রে জানা যায় কিছু পল্লী চিকিৎসক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার টাকায় বিনিময়ে পল্লী চিকিৎসক সনদ পাওয়া যায়। এই প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ ক্রয় করে এমন ভুয়া ডাক্তারের সংখ্যা কক্সবাজার জেলায় হাজার ছাড়িয়ে যাবে এমন বলছেন অনেকে।
ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন এই এলাকায় বেশি রোগি হয়রানির শিকার হচ্ছে।
টেকনাফের সাবরাং এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম জানান স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসক দিয়ে তার ছেলেকে চিকিৎসা করিয়েছেন। ভুল চিকিৎসার কারণে তাদেরকে মোটা অংকের টাকা গুণতে হয়েছে পরে। প্রতিদিন এরকম অসংখ্য লোকজন ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছে চোখের আড়ালে।
জানা যায়, এমববিএিস পাশ করার পরও মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল র্সাভিসের অনুমতি না পাওয়া র্পযন্ত নিজের নামের আগে ডাক্তার লেখা যায় না। তারপরও একটি ফার্মেসী দিয়ে নিজের নামের আগে লিখে যাচ্ছে ডাক্তার। অমুক ডাক্তার তমুক ডাক্তার।
কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন জানান, এম.বি.বিএস পাশ না করলে কেউ ডাক্তার লিখতে পারে না। ইদানিং দেখতে পাচ্ছি হোমিওপ্যাথিকরাও ডাক্তার লিখছে আবার পল্লী চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ সনদ নিয়েও নামের আগে সাইন বোর্ডে এবং পরিচয় কার্ডে ডাক্তার লেখার লোকজন বেড়ে গেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *