টেকনাফের বহুল আলোচিত ইয়াবা গডফাদার রবিউল আলম ওরফে ইয়াবা রবিউল অবশেষে কক্সবাজার র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেপ্তার
কক্সবাজারের টেকনাফের নাজিরপাড়ার এলাকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যাবসায়ী সিদ্দিক আহম্মদ ওরফে ব্ল্যাকার সিদ্দিকের দ্বিতীয় পুত্র ইয়াবা রবিউল দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ১৪-৪-২৩/কক্সবাজার র্যাব ১৫-এর চৌকস টিমের হাতে অবশেষে আটক হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,ইয়াবা রবিউল দীর্ঘদিন যাবৎ কখনো ছাত্র পরিচয়,আবার কখনো আইনজীবী পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্পষ্টে মরণব্যাধি ইয়াবা পাচার করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে।
কথিত নামধারী রবিউলের অনুসন্ধানে জানা যায়!
সে রবিউল বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে দামি দামী গাড়িতে সরকারি স্টিকার লাগিয়ে ইয়াবার বড় চালান পাচার কালে ঢাকা শিল্পাঞ্চল থানায় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়ে প্রাই পাঁচ মাস জেল কেটে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে জামিনে বেড়িয়ে এসে আবারো ইয়াবা কারবার দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে।
কে এই ইয়াবা রবিউল।
টেকনাফ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নামধারী হামজালাল এর ছত্রছায়ায় অবৈধ পন্থায় অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে দিনকে দিন বেপরোয়া হয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে নিজেকে সুশীল রাজা হিসাবে পরিচিতি করার পায়তারা করছে।
রবিউলের ইয়াবা কারবারে যারা জড়িত?
তার ভাই সন্ত্রাসী ও বহু ইয়াবা মামলার পলাতক আসামী
ইয়াবা ফরিদ আলম তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক,ইয়াবা রবিউলের পিতা কথিত ব্যবসায়ী নামধারী ইয়াবা গডফাদার ছিদ্দিক ও সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম,ইয়াবা রবিউলের মা রশিদা ইয়াবা পাচারকাজে দামী গাড়িতে যাত্রী হিসাবে ছেলেদের সহযোগিতা করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবৎ।
রবিউলের মা রশিদা বেগম ইয়াবা মামলার অভিযুক্ত আসামী,২০১৭/সালে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ ঢাকা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর জামিনে বেড়িয়ে এসে আবারও ছেলেদের ইয়াবা পাচার কাজে দামী গাড়িতে চড়ে সহযোগিতা করে আসছে ইয়াবা সুন্দরী রশিদা।
২০১৭/সালে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ রবিউল তেজগাঁও থানায় গ্রেপ্তার হলেও পরিবার থেকে জনমনে খবর ছড়িয়ে দেয় উকালতি সাটিফিকেট এর জন্য লন্ডনে গেছে।
রবিউলের ভাই ইয়াবা ফরিদের নাম উঠতে চমকে যায় স্থানীয় মানুষ।
ইয়াবা ফরিদ ঢাকা মুগ্ধা থানা পুলিশের হাতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়ে অল্প দিনে জামিনে বেড়িয়ে এসে সমাজে ত্রাশ সৃষ্টি করে,এরপরে ঢাকা শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশের হাতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ আবারও গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে বেড়িয়ে এসে রামরাজত্ব কায়েম করছে সন্ত্রাসী ফরিদ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় ফরিদ একজন সন্ত্রাসী ও মাদক গডফাদার হিসাবে চিহ্নিত থাকলেও অদৃশ্য কারণে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে অপরাধী ফরিদ।
এতো ক্ষমতার উৎস কি?
টেকনাফ সদর আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জড়িত ইয়াবা গডফাদার হামজালাল রবিউলের আপন মামা,হামজালালের ছত্রছায়ায় উক্ত ইয়াবা পরিবারের অপকর্ম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে পড়ছে না।
কথিত নেতা হামজালারের পেশিশক্তির প্রভাব বিস্তারে ইয়াবা রবিউলের পুরো পরিবার ইয়াবা ব্যবসা করে কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনেই দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করছে।
ইয়াবা রবিউলের পরিবারের সবাই বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট গ্রেপ্তার হলেও মাদক তালিকায় তাদের নাম পাওয়া বড় মুসকিল?
টেকনাফ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর নেই ইয়াবা পরিবারের অপকর্মে।
ঢাকা,চট্টগ্রাম,কক্সবাজার সহ নানাবিধ স্থানে একাধিক বাড়ি ও গাড়ির মালিক হয়েছে উক্ত ইয়াবা পরিবার।
অল্প সময়ে আংগুল ফুলে কলাগাছ,কলাগাছ ফুলে বটগাছ এবং বটগাছ ফুলে জোড়া বটগাছে পরিণত এই পরিবার।
তাদের এইসব অনৈতিক কাজে কেউ বাধা দিতে গেলে হুমকি ধামকি মারধর বা প্রয়োজনে খুনখারাপি করতেও পিছপা হয়না,এমনকি তাদের অনৈতিক কাজে বাধা প্রদান করায় ২০১৫/সালে প্রকাশ্য দিবালোকে আজিজুল হক ওরফে মার্কিন কে হত্যা করে তার স্ত্রী কে বিধবা ও তিনটি সন্তান কে এতীম করে দেয়,তার এতীম সন্তানেরা আজ খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে।
আজ ৮ টি বছর অতিবাহিত হলেও মার্কিন হত্যা মামলাটি জেলা ও দায়রা জর্জ আদালতে বিচারাধীন রয়েছেন।
তাদের নিজ এলাকায় বাড়ি গাড়িসহ প্রায় ৪ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।
এবং টেকনাফ পৌরসভায় ৪ নাম্বার ওয়ার্ড এর অলিয়াবাদ নামক স্থানে আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন-৫০ লক্ষ টাকার জমি ক্রয় করে ৫ তলা ফাউন্ডেশন দেয়া ভবনের ২ তলা সম্পন্ন হয়েছে।
তাদের অপকর্মের শেষ কোথায়?
বিশেষ অনুসন্ধানে আরো জানা যায়।
ব্ল্যাকার সিদ্দিক একজন চাঁদের গাড়ির হেল্পার ছিল,তার ছেলে ফরিদুল আলম ও চাঁদের গাড়ির হেল্পার ছিল,এত অল্প সময়ে এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উৎস কোথায় তা জানতে রিতীমত চমকে যাচ্ছে টেকনাফ উপজেলার স্থানীয় মানুষ।
তাদের কোন বৈধ আয়ের উৎস নেই,পুরো পরিবার ইয়াবা ব্যবসা করে এই বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন।
সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ ২০১৮ ইং তারিখে দামী গাড়িতে পতাকা লাগানো র-দ ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার পরিচয় দানকারী সরকারি লোগো লাগিয়ে ইয়াবা পাচার করার সময় সিএমপি কর্ণফুলি থানার পুলিশের হাতে ৫০০০০-হাজার ইয়াবাসহ ব্ল্যাকার সিদ্দিকের আপন ভাতিজা ইয়াবা রবিউলের গাড়ির ড্রাইভার জসিম উদ্দিনকে আটক করতে সক্ষম হয়।
এইসময় ইয়াবা ব্যাবসায়ী সিদ্দিক ও তার দুই ছেলে রবিউল,ও ফরিদ পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও আটক জসিমউদদীন আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে বলেন এই ইয়াবার প্রকৃত মালিক সিদ্দিক আহম্মদ ও তার দুই পুত্র ফরিদুল আলম,রবিউল আলম।
সম্প্রতি উক্ত মামলাটি সিআইডির হাতে গেলে তাদের তদন্তে উঠে এসেছে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের হিসাব।
সিআইডি সুস্পষ্ট তদন্ত করে মানিলান্ডারিং মামলা রুজু করেছেন,আটক হওয়া সিদ্দিকের ছেলে রবিউল আলম ওরফে ইয়াবা রবিউল এর বিরুদ্ধে ঢাকা সহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা চলমান আছে।
এমনকি উক্ত রবিউল বিভিন্ন ছদ্মবেশে,কখনো প্রশাসনিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কখনো সাংবাদিক বা কখনো আইনজীবী পরিচয় দিয়ে ছদ্মবেশে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসা করে আসছে।
অপরাধের শেষ নাই?
দীর্ঘ ১ যুগ ইয়াবা সহ বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়ে প্রশাসন কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আইনের তোয়াক্কা না করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।
সুচতুর রবিউলের ইয়াবা পরিবার?
রবিউলের পিতা তালিকাভুক্ত মাদক গডফাদার ছিদ্দিক আহমদ বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ ঢাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করলেও জেলখানার দেওয়ালে আটকিয়ে রাখতে পারেনি,অবৈধ টাকার বদৌলতে অল্প দিনে জামিনে বেড়িয়ে এসে আবারও অপরাধের স্বর্গরাজ্যে অবস্থান উক্ত সুকৌশলী ইয়াবা পরিবারের।
রবিউল মা ইয়াবা সুন্দরী রশিদার রণকৌশল?
ছেলেরা ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হলে এলাকায় প্রচার করে উকালতি সাটিফিকেট এর জন্য লন্ডনে গেছেন,ছেলে ইয়াবা ফরিদ গ্রেপ্তার হলে প্রচার করেন প্রবাসে গেছেন,আর স্বামী ছিদ্দিক আহমদ গ্রেপ্তার হলে প্রচার করেন ওমরা বা হজ্ করতে গেছেন,রবিউলের মা রশিদা গ্রেপ্তার হওয়ার খবর এলাকায় কিছুটা জানাজানি হলে বলেন,আমি ইন্ডিয়া চিকিৎসার কাজে গেছিলাম?।
তাদের অপরাধের লাগাম টানবে কি স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্কুল শিক্ষক বলেন ইয়াবা গডফাদার ছিদ্দিক পরিবারের অনৈতিক কর্মকান্ডের শেষ হবেনা,আমরা কেউ মুখ খুলে কথা বললে বেওয়ারিশ লাশে পরিণত হবোই।
তাদের অপরাধকর্মে সহযোগিতা করার নেতা নেতৃত্ব মানুষ বেশি আছে টেকনাফে,তবে আমি বিশ্বাস করি,তাদের বিরুদ্ধে পরিশুদ্ধ অভিযানে সফল হবে একমাত্র বাংলাদেশ র্যাব।
অবশেষে ১৪-৪-২০২৩ তারিখে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর একটি চৌকস টিম তার কলাতলির গোপন আস্তানা থেকে রবিউল কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এই ইয়াবা ব্যবসায়ীর গ্রেফতারে আনন্দে আত্মহারা টেকনাফবাসী র্যাব-১৫ এর সংশ্লিষ্ট সকলকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
Leave a Reply